চলতি কাতার বিশ্বকাপে আগামী রবিবার ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছরের ট্রফি খরা ঘুচানোর সুযোগ লিওনেল মেসিদের সামনে। ২০১৪ সালের পর আরেকটি ফাইনালে আর্জেন্টিনা, এবার ভাগ্য পাল্টানোর মিশন। প্রিয় দলকে শুভকামনা জানিয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাবেক তারকা মাশরাফি মুর্তজা, পাঠকদের জন্য তা হুবুহু তুলে ধরা হলো- ‘স্বপ্নের ফাইনাল আট বছরে দুইবার। আট বছর আগে রোজা চলছিল, সেহরির ঠিক পরেই গোৎজের গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল আর্জেন্টিনা। তখন মনে হয়েছিল আর সম্ভব না, কারণ বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠা চারটেখানিক বিষয় না।

সেখানে শুধু ভালো খেললেই হয় না,অনেক সমীকরণের সঙ্গে ভাগ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১৮-তে কোয়ার্টার ফাইনালেই (আসলে শেষ ষোলো) বাদ, সাত গোলের খেলায় তিনটা দিয়েও টিকে থাকতে পারলো না। এবার সবাই যখন বলছিল টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত, আসলে মন সাড়া দেয়নি। কারণ বিশ্বকাপ অন্য জিনিস। এখানে ফাইনালে যেতে রাউন্ড সিক্সটিন থেকে ফাইনালে পৌঁছানোর ধাপই তিনটি, যেখানে নকআউট পদ্ধতি এর আগে তো গ্রুপ রাউন্ড আছেই। আশঙ্কা সত্য হয়ে প্রথম ম্যাচেই সৌদির কাছে হার, পরে সব ম্যাচই অলমোস্ট ফাইনাল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলছে, এটা ভাবাই যায় না।

আর্জেন্টিনার রোড টু ফাইনালের সব ম্যাচই দেখেছি, প্রথমবারের মতো মেসিকে যেভাবে বিশ্বকাপে দেখতে চেয়েছি, সেটা দেখে আরও ভালো লেগেছে। এখনও পর্যন্ত তিনটা অ্যাসিস্টসহ পাঁচটা গোল। এমবাপ্পের সঙ্গে একই অবস্থানে। যদি দুজনের কেউ ফাইনালে গোল না করে, অ্যাসিস্টের কারণে গোল্ডেন বুট মেসিই পাবে। আর পেনাল্টি নিয়ে যত কথা,আমার তো মনে হয় মেসির পেনাল্টি মিস নিয়েই এ যাবৎকাল সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে। নিন্দুক হতে তো জ্ঞানী হতে হয় না, হতে হয় কট্টরপন্থী। আর্জেন্টিনার এই দলটার সবচেয়ে ভালো দিক হলো, দলের সবাই জানে মেসি সেরা, কিন্তু মেসির সেরাটার জন্য কেউ বসে থাকছে না।

হিগুয়েন, আগুয়েরো ঘুরে শেষমেশ একজন স্ট্রাইকার (আলভারেজ) পেলো, যে আসলে দরকারের সময় গোল করেছে। ডি পল তো মেসির না শুধু, পুরো দলেরই ভ্যানগার্ড। প্রথম ম্যাচ বাদে রোমেরো, ওটামেন্ডি ঠিকঠাক নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে। আর ২১ বছর বয়সী ফার্নান্দেজ তো এবার বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের অন্যতম দাবিদার। আর সবাইও খুব খারাপ করেনি। এত কিছুর পর একজনের কথা না বললেই না, সে হলো লিওনেল স্কালোনি। বয়স কম কিন্তু দারুণ একজন সাহসী মানুষ। প্রথম ম্যাচের পর মূল দলের বাহিরে গিয়ে এভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এত বড় টুর্নামেন্টে কিছু তরুণদের ওপর আস্থা রাখা এবং তাদের থেকে সেরাটা বের করে আনা এক কথায় অসাধারণ।

ভিন্ন ভিন্ন ম্যাচে ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাট, যা শুরুতে মনে হয়েছে এত চেঞ্জ করছে কেন, পরে আসলেই আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা দারুণভাবে সেটার সাথে মানিয়ে পারর্ফম করে ম্যাচ জিতিয়ে এনে স্কালোনিকে আরও সাহসী করে তুলছে। শুধু দুইটা ম্যাচের উদাহরণ দেই- নেদারল্যান্ডসের সাথে নামলো পাঁচ ডিফেন্স নিয়ে হাফ টাইমে করে ফেললো চার, ঠিক পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সাথে নামলো চার ডিফেন্স নিয়ে হাফ টাইমে করলো পাচ। এই যে খেলার ভেতরেই ফরমেশন চেঞ্জ করা তাও হাফ টাইমে, অপোনেন্টেকে রিয়াকশনের সময় না দেওয়া, দারুণ কিছু মুভ তার থেকে দেখা গিয়েছে।

ইনফ্যাক্ট অস্ট্রেলিয়ার সাথেও ৫০ মিনিটে হুট করেই চার ডিফেন্স থেকে পাঁচটা করে দেওয়া এবং তার জন্য খেলোয়াড়দের মানসিক প্রস্তুত করা, সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে, নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করে এতো প্রো-অ্যাকটিভ থাকা আসলেই অসাধারণ। একটা ম্যাচ বাকি, সব ঠিকঠাকভাবে মিললে হয়তো কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছাবে, আর না হলে আরও একবার ফাইনালে হেরে রানার্সআপ। তবে তাতে আর্জেন্টিনার এই বীরত্বে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়বে না। ফ্রান্স অলরেডি দেখিয়েছে তারা কেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। একজন আর্জেন্টিনা দলের চরম ভক্ত হিসেবে চাই এ বিশ্বকাপ জিতুক, সবার চাওয়া হয়তো মেসির জন্য, আমারও খুব ভিন্ন না, তবে তার আগে জিততে চাই শুধুই আর্জেন্টিনার জন্য যে দলকে ভালোবেসেছি স্রেফ আর স্রেফ একজনকে দেখে- দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x