তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে ২২৭ রানে বিশাল জয় পেল ভারত। ৪১০ রানের লক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৮২ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। এর ফলে ২২৭ রানের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ। এর ফলে ২-১ এ সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এর আগে ইশান কিশানের ঝোড়ো ডাবল সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সামনে রান পাহাড়। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৪০৯ রান করে ভারত। বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছিল দুজনকেই আউট করার। কিন্তু ভাগ্য যেন সঙ্গে ছায়ার মতো ছিল ইশান কিশান আর বিরাট কোহলির। বারকয়েক আউট থেকে বেঁচে যাওয়ার পর তারা রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন স্বাগতিক বোলারদের ওপর।
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটিকেই ডাবলে রূপান্তরিত করেছেন তরুণ ইশান কিশান। সেটাও আবার ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরিতে। সেঞ্চুরি পেয়েছেন ভারতীয় ব্যাটিং স্তম্ভ বিরাট কোহলিও। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ভারতের সবচেয়ে বড় দলীয় সংগ্রহটি ছিল ৪ উইকেটে ৩৭০ রানের। ২০২১ সালে মিরপুরে এই রেকর্ড গড়েছিল ভারত।
আজ শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেটের দেখা পান মেহেদি হাসান মিরাজ। নিজের প্রথম বলে এলবিডব্লিউয়ে ফিরিয়ে দেন অভিজ্ঞ শিখর ধাওয়ানকে (৩)।
মিরাজের ঘূর্ণি ডেলিভারিটি ডিফেন্ড করেছিলেন ধাওয়ান। বল প্যাডে লেগে গেলে আবেদন করেন বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা। কিন্তু আম্পায়ার সে আবেদনে সাড়া দেননি। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ এবং জিতে যায়। নিজের পরের ওভারে আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন মিরাজ। এবার শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছিলেন কোহলি। কিন্তু সহজ ক্যাচ ফেলে দেন লিটন। ১ রানে জীবন পান কোহলি।
এরপর বড় জুটি গড়ে তোলেন কিশান আর কোহলি। ইনিংসের ১৯ আর ২০তম ওভারে দুজনেরই আউটের সম্ভাবনা জেগেছিল। মোস্তাফিজের বলে কোহলি মিডঅফে ক্যাচ তুললে সেটি তালুবন্দী করেন লিটন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি তার হাতে পড়ার একটু আগে মাটি ছুঁয়ে গেছে। কোহলি তখন ২২ রানে।
পরের ওভারে মিরাজের বলে ইশান কিশানের ক্যাচ নিয়েছিলেন সাকিব। ডিপমিডউইকেটে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্তভাবে বলটি ধরেন সাকিব। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না, ক্যাচ হয়েছে কিনা। আম্পায়ার চেক করে দেখেন, এবারও বল মাটিতে স্পর্শ লেগেছে। ব্যক্তিগত ৮৪ রানে বেঁচে যান কিশান। ১৫ রানে ভারত প্রথম উইকেট হারানোর পর কিশান-কোহলি মিলে গড়েন ১৯০ বলে ২৯০ রানের বিধ্বংসী জুটি।
এর মধ্যে বেশি ভয়ংকর ছিলেন কিশান। ৮৫ বলে ঝোড়ো সেঞ্চুরি করা এই বাঁহাতি ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটিকে রূপ দিয়েছেন ডাবলে, ১২৬ বলেই। যেটি কিনা ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড। শেষতক এই ব্যাটারকে সাজঘরের পথ দেখান তাসকিন আহমেদ। ১৩১ বলে ইশানের ২১০ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে ছিল ২৪টি চারের সঙ্গে ১০টি ছক্কার মার। এরপর টানা দুই ওভারে আইয়ার আর রাহুলকে আউট করেন এবাদত। ৩ রান করে আইয়ার হন লিটন দাসের ক্যাচ, লোকেশ রাহুলকে (৮) বোল্ড করেন টাইগার পেসার।
এদিকে কোহলি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, চতুর্থ বাংলাদেশের বিপক্ষে। ভারতীয় ব্যাটিং স্তম্ভকে শেষতক মিরাজের ক্যাচ বানান সাকিব। ৯১ বলে কোহলির ১১৩ রানের ইনিংসে ছিল ১১ চার আর ২ ছক্কা। শেষদিকে অক্ষর প্যাটেল ১৭ বলে ২০ আর ওয়াশিংটন সুন্দর ২৭ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে চারশোর্ধ্ব সংগ্রহ এনে দেন। বাংলাদেশের এবাদত হোসেন, সাকিব আল হাসান আর তাসকিন আহমেদ নেন দুটি করে উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমান আর মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার একটি করে।